রোহিঙ্গারা রুখে দাঁড়াও একবার

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৭ সময়ঃ ৩:০১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:১২ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার:

এই অযাচিত-অসংলগ্ন-অমানুষিক নির্যাতনের ইতিহাস দু-একদিনের নয়; শত শত বছর ধরে বয়ে চলা পুরোনো এক অন্ধকার অধ্যায়ের নাম রোহিঙ্গা নিপীরণ। এভাবেই তোমাদের প্রতিটি প্রজন্মের দুর্বিসহ জন্ম-মৃত্যু ঘটে চলেছে। চোখের সামনে গণহত্যার চাক্ষুস নিদর্শন দেখেছো, এখনও দেখছো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। জাহান্নামের আগুনের লেহিহান শিখা দেখনি; দেখেছো চোখের সামনে ভষ্মিভূত হতে আপনজনদের। শেষ বিচারের ফয়সালা দেখনি; দেখেছো নোবেল শান্তি বিজয়ী সূচির নির্মম-নির্দয় অবিচার। বর্মিরা তোমাদের মানুষ নয় কীটপতঙ্গ মনে করে। তাইতো প্রতিনিয়ত দেখছো জ্বালিয়ে-গলিয়ে-চাকায় পিষ্ট করে ফেলা দু:গন্ধময় বিভৎস মৃতদেহ। খাকি পড়া ভদ্ররলোকেরা তোমাদের খাওয়ার উপাদান মনে করে; তাইতো গরু-ছাগল-মুরগীর মতো কেটে কেটে টুকরো টুকরো করে। তোমরাতো মানুষ না, তাই তোমাদের অমানুষের কাতারে ফেলে পুঁতে রাখে; যদি দু:গন্ধ ছড়ায় এই ভয়ে। শান্তির অমিয় সুরা ওরাই পান করেছে; তাই শান্তির বাণী শুধু ওদের মুখশ্রী আশ্রিত জিহ্বায় মানায়।

তোমরা শান্ত বর্মি দেশে কেন অশান্তির সৃষ্টি করছো? খাকিরা বলে, তোমরা সন্ত্রাসী। অবশ্য ভাটির দেশের অনেকেও এমনটাই ভাবে। নীচু লোকদের কথার চেয়ে উঁচু দরে বসবাসকারীদের কথাকে বিশ্বাস করাটাই অনেকের কাছে সমীচীন মনে হয়। তাই নির্বোধের মতো তোমাদের নয় শান্তির দূত সূচিদের কথাই বিশ্বাস করে ধরে নেয়; তোমরা রোহিঙ্গারাই যত নষ্টের গোড়া। তাই উচ্ছেদ করতে আপত্তি কোথায়? বর্মি আর্মিরা রোহিঙ্গা নিধনে নতুন গুয়াতেনামার সূচনা ঘটিয়েছে। বেশ করেছে। কেন তোমরা সেখানে অশান্তি সৃষ্টি করছো?

এত নির্মম অত্যাচার সহ্য করেও কেন তোমরা জেগে ওঠো না? তোমরা কি জানো না, যে হারে সবাই তাকে হারায়? তোমরা কি জানো না, বিজয়ীর গলায় একটি নয় শত শত মালা চরায়? হেরে যাওয়াদের কেউ হাত বাড়িয়ে তুলতে যায় না; ‘হেরো হেরো’ বলে চ্যাঁচিয়ে সারাপাড়া মাথায় তোলাটাই এ সমাজের রীতি-নীতি ও নিয়ম। এতএত দুর্বিষহ সীমাহীন দুর্ভোগের ভেতর দিয়েই এগিয়ে চলছে তোমাদের জীবন। দেখো, তবুও বিরূদ্ধ নিন্দুকের অভাব নেই তোমাদের নিয়ে কুৎসা রটাবার। স্বদেশে নয় পর দেশের কথা বলছি। যে দেশে আশ্রিত সে দেশের কথা বলছি। এখানেও তোমাদের লাঞ্ছনা-বঞ্চনার পক্ষে-বিপক্ষে সান্তনা-গঞ্জনা শোনা যায়।

কেন তোমরা আশ্রিত? কেন তোমরা উঠে দাঁড়াতে পারো না, বলতে পারো না, নিজেকে রক্ষা করতে পারো না? তোমরাতো একা নও। মৃত্যুর সান্নিধ্যে তোমাদের চেয়ে বেশি কাদের দেখা হয় সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা কিংবা রাত-বিরাতে? তবে কিসের ভয় তোমাদের?

রুখে দাঁড়াও একবার। দেখবে পেছনে হাজার হাজার অদৃশ্যশক্তি হাজির শুধু তোমাদের জন্য। ভীতু-কাপুরুষ না হয়ে, নির্ভরশীলতা বন্ধ করে উঠে দাঁড়াও। এটাইতো চাইছেন তোমাদের কাছে পরম পরাক্রমশালী। যতক্ষণ তোমরা তা করবে না; ততক্ষণ তিনিও তোমাদের সাহায্যে হাত বাড়াবে না। তোমরা কি এটাই চাও যে এভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েই জীবন কাটাতে? তবে জেনে রাখো, দুর্বলের জন্য সবার করুণা হয়, আফসোস হয়; ব্যস এটুকুই।

বাঁচতে হলে বাঁচার মতো বাঁচো। আর যদি জিততে চাও; তাহলে বীরের মতো লড়াই করে মরো। আমাদের যদি থাকে সাহসিকতার-৭১; তবে তোমাদেরও কেন নয় ১৭-১৮ কিংবা ১৯।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G